সাঈদীর বিপক্ষে সাক্ষী না দেয়ায় ভারতের কারাগারে বন্দী ছিলেন বালি! |

সুখরঞ্জন বালির কাহিনি: একটি রোমহর্ষক বাস্তবতা

সুখরঞ্জন বালি, পিরোজপুর জেলার উমিদপুর গ্রামের একজন সাধারণ প্রবীণ ব্যক্তি। ৭২ বছর বয়সী এই মানুষটি এক সময় মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিজের ভাইকে হারানোর মতো নির্মম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায় শুরু হয় ২০১২ সালে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও চাপে সাক্ষ্য দেওয়ার অস্বীকৃতি

২০১২ সালে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। সেই সময় জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা চলছিল। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার চাপ আসে সুখরঞ্জন বালির ওপর, যাতে তিনি সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। কিন্তু তিনি জানিয়ে দেন যে তিনি কোনো মিথ্যা সাক্ষ্য দেবেন না।

নিখোঁজ ও ভারতে পাঠানো

২০১২ সালের ৫ নভেম্বর আদালতের বারান্দা থেকে তাকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক ধরে নিয়ে যায়। তাদের কথায়, তাকে “ডিবি পুলিশ” পরিচয় দিয়ে একটি গাড়িতে তোলা হয়। এরপরের ঘটনা আরও চাঞ্চল্যকর। সুখরঞ্জন বালিকে চোখ বেঁধে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বিজেপির সদস্যদের উপস্থিতিতে তাকে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ভারতের কারাগারে মানবেতর জীবন

ভারতে প্রথমে তাকে বসিরহাট কারাগারে রাখা হয় এবং পরে দমদম কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে পাঁচ বছর ধরে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করেন। কারাগারের অন্ধকার ঘর, শারীরিক নির্যাতন এবং মানসিক যন্ত্রণা তাকে চরম দুর্দশার মধ্যে ফেলেছিল।

মুক্তি ও দেশে প্রত্যাবর্তন

২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় সুখরঞ্জন বালিকে মুক্তি দেওয়া হয়। দেশে ফিরে তিনি আরও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিজের গ্রাম উমিদপুরের একটি ভাঙা ঘরে বাস করছেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদাহরণ

সুখরঞ্জন বালির এই ঘটনা শুধু তার একক অভিজ্ঞতা নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি চরম উদাহরণ। এটি মনে করিয়ে দেয়, কোনো মানুষকেই যেন রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয়।